শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন

আর মাছ খাননি জাহানারা ইমাম – সালেম সুলেরী

আর মাছ খাননি জাহানারা ইমাম – সালেম সুলেরী

আর মাছ খাননি জাহানারা ইমাম - সালেম সুলেরী

মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা সন্তানকে হারিয়ে আর মাছ খাননি জাহানারা ইমাম । ভাবতেন, ঠুকরে ঠুকরে মাছেরা খেয়েছে সন্তানের হারানো লাশ…. সালেম সুলেরী

একদা বাড়িতে মোরগ পালতেন গৃহিণী জাহানারা ইমাম। যুদ্ধবর্ষে মুক্তিযোদ্ধা-সন্তান ‘শাফি ইমাম রুমি’কে হারালেন। অতঃপর খাদ্যতালিকায় আনলেন বিশেষ পরিবর্তন। মাছ খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলেন। মনে করতেন নদীতে ফেলা হয়েছিলো ছেলের লাশ। মাছেরা তা ঠুকরে ঠুকরে খেয়েছে।

প্রিয়জন বিয়োগান্তে কী ব্যাথাভরা অনুভূতি! অতএব কোনো মাছই আর মুখে নিতে পারতেন না। কিন্তু লাল ঝুটি’অলা টগবগে মোরগ! যেন মোরগ-মাতানো ছিলো সন্তান ‘রুমি’র জীবন-উন্মাদনা। যুদ্ধবর্ষে অ্যামেরিকার ইলিনয়ে পড়ার মহাসুযোগ হাতছাড়া করলো। মুক্তিযুদ্ধের ডাকের আদলেই ডেকে উঠতো কুকরু-কু-উক। বাবরি’অলা মোরগ হয়েই যোগ দিলো গেরিলা যুদ্ধে। সেই যুদ্ধের অগ্নিখোয়াড়ে আত্মবলিদান, ফিরলোনা লাশটিও..!

সেই প্রতীক-পটভূমিতেই আমার কাব্যপ্রয়াস : মোরগ সৌন্দর্য। ‘বারুদে যে ফুল ফোটে’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত। শহিদজননী জাহানারা ইমাম আমার দূর সম্পর্কের চাচী। জন্ম ১৯২৯-এর ৩ মে, মুর্শিদাবাদ, ভারতবাংলা’য়। শ্বশুরালয় আমাদের বৃহত্তর রংপুরের নীলফামারী, ডোমার, খাটুরিয়ায়।

যুদ্ধবর্ষেই প্রয়াত স্বামী প্রকৌশলী শরিফুল ইমাম-এর পৈতৃকবাস। শহীদজননী জাহানারা ইমামের প্রয়াণ ১৯৯৫-এর ২৬ জুন। অ্যামেরিকার মিশিগানে ক্যান্সারের চিকিৎসা গ্রহণকালে। অপর সন্তান প্রবাসী জামি’র বসবাসস্থানে।

মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক-দালালদের বিচারে গড়েছিলেন গণ-আদালত। সেই স্মারক কর্মের জন্যে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে অনন্য মহীরূহ। লিখেছেন ইতিহাস আশ্রিত গ্রন্থ ‘একাত্তুরের ডায়েরী’।

শৈশবে পাওয়া প্রিয় নারীব্যক্তিত্ব এখন কেবলই স্মৃতি। শুদ্ধতাবাদী কবিতাগুলোই যেন উপজীব্য-উর্বশী। আমিও নুনে-ঘামে জীবিত থাকবো না। কিন্তু থেকে যাবে অনুভূতিসিক্ত কাব্য-শ্রদ্ধাঞ্জলি। নিউইয়র্ক

মোরগ-সৌন্দর্য ♠সালেম সুলেরী =====√√
শহিদজননী জাহানারা ইমাম, শহিদ রুমি স্মরণীয়বরেষু

পঁচিশের পাগল পুরুষ পেলো না পৃথিবীর প্রার্থিত পালকি।
আলপথ ভেঙে ভেঙে বেহারার পদচিহ্ন খেয়েছে সময়,
কদমঝুলন্ত এক টোপর মাথায়
অথবা দুরন্ত মোরগের ঝুঁটি-মতো দুলিয়ে মুকুট–
যুবক গেলো না দূরে, রাজকন্যের আদুরে হাতে বোনা
প্রণয় মাদুরে।
ভোর হলো দোর খোলো বলবার আগেই মা তার
নিভু নিভু কেরোসিন-শিখায় ছেলেকে খুঁজলেন কিন্তু
মুখ খুলে বসে থাকা উদার দরোজা বলে দিলো–
সে এখন দূরে, যুদ্ধ-মিছিলের সমুদ্দুরে …।

সকাল উঠলো হেসে, আড়মোড়া ভাঙলো একটি মোরগ,
ছেলেটা ডাকত তাকে– আয়রে আমার সক্রেটিস,
মা এবার হাসলেন আর দেখলেন
মোরগ রচনা করে যাচ্ছে তার ছেলের স্বভাবে
উরুতে ব্যায়াম, কণ্ঠে কোরাস ও পলকে আঘাত,
নাচিয়ে অর্ধচন্দ্রের বিচিত্র ধনুকপুচ্ছ,
শরীরে পরেছে যেন পতাকা রঙের লাল-নীল পরিধেয়,
খুদ কুড়ো দিয়ে ডাকলেন কিন্তু শুনলো না,
বিপ্লব-বিদ্রোহে ডাকাবুকো ছেলেটাও শুনতো না।

তাকাতে তাকাতে মা’কে পেয়ে বসলো হঠাৎ মোরগ-সৌন্দর্য…।
দু’চোখে জ্বলছে তার উনুন-উত্তপ্ত কাঠের জ্বালানি।
দিন শেষে রাত হয়, ভোর হয়,
মা শোনেন খুপরির ডাক
চিবুক উঁচিয়ে মোরগের উঁচু আহ্বান–
কুকরু-কু-উক কুকরু-কু-উক-কুক…
একটি অচেনা সকালের জন্যে দরোজা খুলবো,
একটি অদেখা দিবসের জন্যে খুপরি ভাঙ্গবো,
একটি উদাত্ত কণ্ঠের পাশে মা যেন দেখলেন :
নিশুতি রাতের একটি যুবক দেহ-ফোটা মোরগ স্বভাবে
ডাকছে এবং ঘরের দরোজা খুলে চলে যাচ্ছে দূরে…

রাতের বেদনা কাঁধ থেকে ছুড়ে ফেলে
টগবগে মোরগ অথবা ছেলেটি বলছে যেন–
স্বাধীনতা, শুনেছি তোমার নাম, এবার দেখতে চাই, এবার বুঝতে চাই, এবার যুঝতে চাই…,
বাঙলার রক্তঢল আঁখিজল এবার মুছতে চাই।

মৃত্যুতে প্রস্তুত বুক– কুকরু কু উক, কুকরু কুউক..♠

অক্ষরবৃত্ত # salemsuleri.ss@gmail.com

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD